Summary
পদার্থবিজ্ঞানের চর্চা প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিদ্যা, আলোকবিজ্ঞান, গতিবিদ্যা এবং জ্যামিতির সমন্বয়ে শুরু হয়। গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিস প্রথম কার্যকারণ এবং যুক্তির বাইরে ধর্মীয় ব্যাখ্যা অস্বীকার করেন। পিথাগোরাস জ্যামিতি ও কম্পমান তারের ওপর মৌলিক কাজ করেন। ডেমোক্রিটাস পদার্থের অবিভাজ্য একক 'এটম' এর ধারণা দেন, কিন্তু এরিস্টটল মাটি, পানি, বাতাস ও আগুনের মৌলবাদকেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করতেন। আরিস্তারাস সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা প্রদান করেন। আর্কিমিডিস তরল পদার্থের ঊর্ধ্বমুখী বল এবং গোলীয় আয়না নিয়ে প্রথিতিষ্ঠিত ছিলেন। ১৫০০ বছরের জ্ঞানচর্চার বিরতি শেষে ভারতীয়, মুসলিম এবং চীনা সভ্যতা সেই জ্ঞানকে বাঁচিয়ে রাখে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আর্যভট, ব্রহ্মগুপ্ত এবং ভাস্কর গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মুসলিম গণিতজ্ঞ আল খোয়ারিজমি এলজেব্রার প্রতিষ্ঠাতা, আর ইবনে আল হাইয়াম আলোকবিজ্ঞানের স্থপতি। চীনা বিজ্ঞানী শেন কুয়ো চুম্বক ও কম্পাস নিয়ে কাজ করেছেন।
বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞান বলতে আমরা যে বিষয়টিকে বোঝাই প্রাচীনকালে সেটি শুরু হয়েছিল জ্যোতির্বিদ্যা, আলোকবিজ্ঞান, গতিবিদ্যা এবং গণিতের গুরুত্বপূর্ণ শাখা জ্যামিতির সমন্বয়ে। গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিসের (BC 624-586) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, কারণ তিনিই প্রথম কার্যকারণ এবং যুক্তি ছাড়া শুধু ধর্ম, অতীন্দ্রিয় এবং পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। খেলিস সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং লোডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কে জানতেন। সেই সময়ের গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের মাঝে পিথাগোরাস (S27 BC) একটি স্মরণীয় নাম। জ্যামিতি ছাড়াও কম্পমান তারের ওপর তার মৌলিক কাজ ছিল। গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস ( 460 BC) প্রথম ধারণা দেন যে পদার্থের অবিভাজ্য একক আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল এটম (এই নামটি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে থাকে)। তবে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় তার ধারণাটি প্রমাণের কোনো সুযোগ ছিল না বলে সেটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সেই সময়কার সবচেয়ে বড় দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এরিস্টটলের মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন দিয়ে সবকিছু তৈরি হওয়ার মতবাদটিই অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ছিল। আরিস্তারাস (310 BC) প্রথমে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা দিয়েছিলেন এবংতার অনুসারী সেলেউকাস যুক্তিতর্ক দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছিলেন, যদিও সেই যুক্তিগুলো এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। গ্রিক বিজ্ঞান এবং গণিত তার সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছিল সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের (287 BC) সময় (চিত্র 1.01)। তরল পদার্থে ঊর্ধ্বমুখী বলের বিষয়টি এখনো বিজ্ঞান বইয়ের পঠনসূচিতে থাকে। গোলীয় আয়নায় সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে দূর থেকে শত্রুর যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে তিনি যুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। গ্রিক আমলের আরেকজন বিজ্ঞানী ছিলেন ইরাতোস্থিনিস (276 BC), যিনি সেই সময়ে সঠিকভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করেছিলেন।
এরপর প্রায় দেড় হাজার বছর জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা প্রায় বন্ধ হয়েছিল। শুধু ভারতীয়, মুসলিম এবং চীনা ধারার সভ্যতা গ্রিক ধারার এই জ্ঞানচর্চাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। ভারতবর্ষে আর্যভট (476), ব্রহ্মগুপ্ত এবং ভাস্কর গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার অনেক মূল্যবান কাজ করেছেন। শূন্যকে সত্যিকার অর্থে ব্যবহার করার বিষয়টিও ভারতবর্ষে (আর্যভট) করা হয়েছিল। মুসলিম গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানীদের ভেতর আল খোয়ারিজমির (783 ) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয় । তার লেখা আল জাবির বই থেকে বর্তমান এলজেবরা নামটি এসেছে। ইবনে আল হাইয়াম (965) কে আলোকবিজ্ঞানের স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল মাসুদি (896) প্রকৃতির ইতিহাস নিয়ে 30 খণ্ডে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লিখেছিলেন। ওমর খৈয়ামের নাম সবাই কবি হিসেবে জানে, কিন্তু তিনি ছিলেন উঁচুমাপের পণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং দার্শনিক। চীনা গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীরাও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাদের মাঝে শেন কুয়োর নামটি উল্লেখ করা যায় (1031 ), যিনি চুম্বক নিয়ে কাজ করেছেন এবং ভ্রমণের সমর কম্পাস ব্যবহার করে দিক নির্ধারণ করার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।